Category: ব্যবসায়িক উদ্যোগ

  • ভাজ্রিন গ্রুপ ফাউন্ডার রিচার্ড বানসন যিনি ৫ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের মালিক) ও না বলার উদাহরণ

    চরম সফল ব্যক্তিদের সাফল্যের কারন নাকি তাদের না বলার ক্ষমতা। ওয়ারেন বাফেট তার সাফল্যের কারন গুলোর মধ্যে ১ নং কারন বলতে বলায় বলেছিলো ১০০টি সম্ভামনাময় প্রস্তাবের মধ্যে ৯৯টিতেই আমি না বলি। মূল বিষয়টা হলো ফোকাস। না বলার ক্ষমতা = নিরবিচ্ছিন্ন মনোযোগের ক্ষমতা। নতুন টার্গেট বেশি বেশি না বলা আর নিজের এজেন্ডায় ফোকাস থাকা। 

    না বলা মানে নিজেকে নিয়েই পরে থাকা না। মানে খুব আত্নকেন্দ্রিক বা সেলফিস কিছু না। নিজের কাজ বা লক্ষ্যের সাথে সম্পর্ক নাই এমন বিষয় থেকে দূরে থাকা।

    একবার একটা কনফারেন্সে স্পিচ দেয়ার জন্য রিচার্ডকে এপ্রোচ করা হলো। ১ ঘণ্টা স্পিচের জন্য ১ লক্ষ ডলার দেয়ার কথা বলে যোগাযোগ করা হলো। তার অফিস থেকে জানানো হয়েছে রিচার্ড না করেছে। তারা এবার আড়াই লক্ষ ডলার অফার করলো সাথে তাদের ব্যক্তিগত বিমানে আনা নেয়ার অপার দিলো। এবারো স্ট্রেইট না করে দিলো। উদ্যোক্তাদের ইগোতে লাগলো। তারা বললো একটা ফি বলো যাতে রিচার্ড আগ্রহী হবে। সেই যাই চাইবে তাই পাবে। ব্লাঙ্ক চেক অফার করলো। এবারো তাদের না বলা হলো।

    তখন তারা জানতে চাইলো কারন কি? কেন রিচার্ড আমাদের কনফারেন্সে স্পিচ দিবে না।

    রিচার্ডের অফিস থেকে জানানো হলো রিচার্ড কেবল তার স্ট্রাটেজিক গোলের সাথে যায় এমন বিষয়ের সাথে জড়িত হয়। আর সেটা বিনা পয়সায় হলেও সে করে।

    বিষয়টা এখানে। নিজের লক্ষ্যের সাথে যায় না এমন বিষয় গুলো সেটা যতো আকর্ষণীয় হউক সেটা থেকে নিজেকে সড়িয়ে রাখে বলেই তারা এতো সফল।

  • একেবারে শুন্য থেকে খ্যাতি আর সাফল্যের শীর্ষে উঠা জোয়েল অস্টিনের সাফল্যের কারন

    জোয়েল অস্টিন হলো একজন পাস্টর। তার সম্পদের পরিমান ৬০ মিলিয়ন ডলার। সে যখন তার বাবার কাছ থেকে চার্চের দ্বায়িত্ব নেয় তখন সব কিছু একই রকম যাচ্ছিলো। উন্নতি বলতে তেমন কিছুই হচ্ছিলো না। পরে একটা স্ট্রটেজির কারনে দেখা গেলও জ্যামিতিক হারে তার ফলোয়ার বেড়েছে ও অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে।

    তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হলো তার সেই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কথা সে বললো শুরুতে আমি সব গুলো বিষয়ে জড়িত থাকতাম। স্পিচের সময় লাইট কাজ করছে কিনা সেটাও নিজেই তদারকি করতাম। পরে দেখলাম আমি যদি রবিবারের স্পিচটা ভাল করে দিতে পারি তবেই ফলোয়ার বাড়ে।

    আমি পরে এই কাজটাই করি। ৩০ মিনিটের স্পিচ এটাই আমার কাজ।

    জোয়েল পুরো সপ্তাহ ব্যয় করে রবি বারে দেয়া ৩০ মিনিটের সেই স্পিচের জন্য। বৃহঃ – শুক্র চলে স্ক্রিপ্ট লেখার কাজ। ক্লোজ ডোর। তাকে এই দুই দিন কেউই একসেস করতে পারে না। নো ফোন। নো কনটাক্ট। এমনকি তার ওয়াইফও তাকে একসেস করতে পারে না।

    শনি বার চলে মুখস্থের কাজ। মুখস্থ শেষে ক্লোজ দুইটা গ্রুপের সামনে পুরো স্পিচের রিহার্সেল দেয়। এর পর রবিবারে ফুল হাউজ অর্ডিয়েন্সের সামনে ফুল স্পিচ। ইউটিউবে তার ভিডিও গুলো দেখতে পারেন। কি অসাধারণ ভঙ্গিমা। বাচন ভংগি।

    বলা হয় জুয়েল হচ্ছে আমেরিকার শীর্ষ স্থানীয় একজন কি নোট স্পিকার।

    একটা কাজ। ফুল ফোকাস। যা অন্য কেউ করতে পারবে না। যা করলে অর্গানাইজেশনের গ্রোথ ইঞ্জিন সচল থাকে এমনকি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলে সেটা করাই হলো তাদের সাফল্যের কারন।

    আমরা যারা মাল্টি ট্যাক্স করি , সব কিছু নিজে করতে চাই, সব কিছুতে ইনভলভ থাকি তাদের ব্যর্থতার কারন এটাই। এট লিস্ট আমার ক্ষেত্রে এটা ১০০ ভাগ প্রযোজ্য। আমার টার্গেট আমার সেই একটা কাজ খুঁজে নেয়া আর সেটাই করা।

    অন্য গুলো যাতে অন্যরা করবে আর সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করাই হলো আমার একটা কাজেr একটা অংশ। ১৫ বছর স্ট্রাগল করার পর এই জিনিষটা এখন শিখলাম। যদি শুরুতেই জানতাম তাহলে নিশ্চয় আমার বিজনেস ২০ টাইম বেটার থাকতো।

    যারা নতুন আর আমার মতো অবস্থায় আছেন বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারেন।

  • স্টিব জবসের না বলা ও ফোকাস থাকা

    এপল অনেক কিছুই তৈরি করেছে। তার মধ্যে কোনটি নিয়ে আপনি প্রাউড ফিল করেন এমন প্রশ্ন স্টিভ জবসকে করলে তিনি বলেন, যা করেছি তা নিয়ে আমি যেমন গর্বিত ঠিক সমান ভাবে যা করি তাই তা নিয়ে আমি গর্বিত।

    স্টিভ আরো জানায় যা করা যাবে না তা ঠিক করাটা যা করতে হবে তার সমান গুরুত্বপূর্ণ। আর এই বিষয়টা ব্যক্তি আর ব্যবসার জন্য একই ভাবে প্রযোজ্য।

    ফোকাস বলতে মানুষ এটা মনে করে যে যা করতে হবে সেটাতেই মনোনিবেশ করা। আসলে বিষয়টি মোটেও সেই রকম নয়। ফোকাস বলতে আরো শত শত ভালো আইডিয়া বা সম্ভাবনাকে না বলাকে বুঝায়। নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যয় সতর্ক হতে হবে। সাফল্যে মানে ১০০০ জিনিষকে না বলা।

    স্টিভ জবসের কথা গুলো পড়লে বুঝতে পারবেন ফোকাস জিনিষটা কি, না বলা বলতে কি বুঝায়। আমরা প্রায় সবাই সাইনি অবজেক্ট সিন্ড্রোমে ভুগি। এক ব্যবসা না দাড়াতে দাড়াতে আরেক ব্যবসার পেছনে ছুটি। একটা স্কিল ভালো ভাবে না শিখে আরেকটা স্কিল শেখার চিন্তা করি।

    যারা উবার এচিভার তাদের না বলার ক্ষমতা, প্যার্টান যদি খেয়াল করেন তাহলে বুঝতে পারবেন তারা কেন সফল। তারা প্রায় সব কিছু থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখে শুধু একটা বিষয়ে পূর্ণ মনোযোগ দেয়ার জন্য।

    স্টিভ জবস যে বিষয়টি এপলের জন্য সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে প্রতিদিন টানা ৩ ঘণ্টা সময় দিতেন।

    আমরা কি করি?

    বলা হয় সোশ্যাল মিডিয়া যুগে এখন সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ স্কিল হলো ডিস্ট্রাকশন থেকে দূরে থাকার স্কিল।

    এটা আমাদের প্রায় সবার নিচের সমস্যা গুলো আছেঃ

    ১) নানা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করার সমস্যা 
    ২) প্রায় সব স্কিলে মাস্টার হতে যাওয়ার সমস্যা
    ৩) সহজেই কনসেন্ট্রেশন হারানোর সমস্যা

    গত কয়েক মাস আগে আমি বলেছিলাম আমার মনে হয় আমার এটেনশন ডিফিসিয়েন্সি সিন্ড্রোম আছে। কোন কাজে টানা ১০ মিনিট কনসেণ্ট্রেশন দিতে পারি না। আমি কাজ করছি আর অনেক ইম্প্রভ হয়েছে।

  • মার্ক কিউবানের মতে ব্যবসায় ব্যর্থ হওয়ার এক নাম্বার কারন

    ব্যবসায়ী মার্ক কিউবান বেশ ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার। ছোট বেলা থেকেই ব্যবসার প্রতি মনোযোগী ছিলেন। সকুলে থাকতেই বেইসবল প্লেয়ারদের কার্ড বিক্রি করতেন। মার্ক বিলোনিয়ার ব্যবসায়ী। অনেক বড় বড় ব্যবসা তৈরি করেছেন।

    চমৎকার সব সাহসী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। টেকনোলজি, মুভি, টিভি, স্পোর্স্টস সহ নানা ইণ্ড্রাস্ট্রিতে অনেক বড় বড় ব্যবসা তৈরি করেছেন। বিলবোর্ডডট কম তার ছিল। যেটি তিনই ইয়াহুর কাছে ৬ প্লাস বিলিয়ন ডলারে বিক্রি করেছিলেন।

    তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে ব্যবসায় ব্যর্থ হওয়ার এক নাম্বার কারন কি। তিনি বললে জ্ঞান আর চেষ্টার অভাব। অসম্ভব ভাগ্যবান না হলে আপনি কখনো এমন বিজনেস পাবেন না যেখানে কোন প্রতিযোগীতা নাই।

    তার মানে হলো আপনি যখন শুরু করছেন তখন এমন অনেকে আছে যারা আগে থেকে ঐ বিজনেস সম্পর্কে জানে। আপনি যদি এমন একটা বিজনেস শুরু করেন যেখানে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী ঐ ব্যবসা সম্পর্কে আপনার ক্লায়েন্ট সম্পর্কে বেশি জানে তাহলে আপনি অবশ্যই লস করবেনই।

    সমস্যা হলো অধিকাংশ উদ্যোক্তাই এই বিষয়টি বিবেচনায় নেয় না। তারা তাদের ইণ্ড্রাস্ট্রি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে না। ক্লায়েন্ট সম্পর্কে জানে না।

    তাদের সেটাই করতে হবে। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে বেশি জানতে হবে আর বুঝতে হবে। এটাই হলো একই সাথে জ্ঞান আর চেষ্টা বিষয়। আপনি যদি আমার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে আসেন আপনাকে অবশ্যয় আমার চেয়ে ভালো হতে হবে।

    আমার চেয়ে বিজনেস সম্পর্কে বেশি জানতে হবে। আমি যদি আপনার চেয়ে বেশি জানি তাহলে অবশ্যয় আপনাকে বিজনেস থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো। এই না জানার বিষয়টি আর চেষ্টা না করাই হলো শুরুতেই উদ্যোক্তাদের ব্যর্থ হওয়ার কারন।

    মার্কের কথায় আমার অনেক কিছুতে ব্যর্থ হওয়ার কারন যেমন খুঁজে পেয়েছি ঠিক তেমনি অনেকে কেন ব্যর্থ হয় সেটাও বুঝতে পারছি। সফল হতে হলে অবশ্যয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে ইন্ড্রাস্ট্রি সম্পর্কে বেশি জানতে ও চেষ্টা করতে হবে। সবার চেয়ে বেশি জানলে আর প্রতিযোগীরা যখন বিশ্রাম করবে তখন আপনি বিজনেস বাড়াতে কাজ করবেন এমন হলে উদ্যোগী আপনি হতেই পারেন।

  • না পারলে একা অন্যথায় যৌথ ভাবেই ব্যবসা করবেন এমন একটা মাইন্ডসেট তৈরি করুন

    একটা সাইট – এফিয়েলট, অথরিটি ব্লগ, ই-কমার্স, সার্ভিস কিংবা প্রোডাক্ট 
    যাই হোক একটা বিজনেস। এই বিজনেস কে সফল করতে অনেক কিছু লাগে।

    আইডিয়া, স্কিল এবং ফান্ড। নানা ধরনের স্কিল, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। অনেকেই ইন্ডিভিজুয়ালি শুরু করে সফল হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ মানে ৯০% এর ক্ষেত্রেই দেখা যায় ফেইলড।

    কারন সাফল্য অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। চেষ্টা করলে আর স্কিল থাকলেই সফল হবে এমন কিন্তু না। বাজার, ইকোনোমি, কম্পিটিশন সহ নানা এক্সটারনাল ফ্যাক্টর সাফল্যকে প্রভাবিত করে। এই সবের বেশির ভাগই উদ্যোক্তার নিয়ন্ত্রনে থাকে না।

    তাই অনেক সময় সাফল্য পরিশ্রম, অর্থ আর দক্ষতার উপর নির্ভর করে না। ব্যবসা মানে রিক্স। এই রিক্সকে আগে থেকে কমিয়ে আনার বিষয় সচেস্ট হলে সফল না হলেও ক্ষতি একেবারে কমিয়ে ফেলা যায়। আমার মতে বাংলাদেশী মানুষের একটা বড় সমস্যা হলো যৌথ উদ্যোগে ব্যবসা করা। আমরা সেটা জানি না। পারি না।

    কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। আর বিশ্বাস করলে অবিশ্বাস করার মতো ঘটনা সে ঘটাবেই। এটা সাইকোলজিক্যাল, কালচারাল আর সোসিও ইকোনোমিক্যাল সমস্যা। ব্যবসার জন্য বড় ধরনের দুর্বলতা। এই দুর্বলতাকে সক্ষমতায় রূপান্তর করতে পারলে ব্যবসার যে করুনদশা শুনি আমার মতে অনেক অংশই কমে যাওয়ার কথা। যাবেও।

    আমি অনেক গুলো কারনেই যৌথ অংশীদারে ব্যবসা করার বিষয়ে সবাইকে সিরিয়াসলি চিন্তা করতে বলবো ।

    কারন গুলো কিছু কিছু গত কালের আলোচনায় আমি বলেছি। যারা উপস্থিত ছিল তারা নিশ্চয় সেই গুলো জানে। আরও কিছু পয়েন্ট আছে। সময় করে লিখবো। কারন আমি বিশ্বাস করি কয়েকজনের সম্মিলিত শক্তি এখন অনেকটাই অত্যাবশকীয়।